ইস্কন বাংলাদেশী তথা সকল দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নতুন আস্থা
বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে যে গোষ্ঠীটি ক্রমান্বয়ে জঙ্গি সংগঠন এর সাথে তুলনা করছে বা পক্ষান্তরে জঙ্গি সংগঠন দাবী করছে তাঁরা মোটেই জঙ্গি সংগঠনের সংজ্ঞা না জানা বোধহীন দুগ্ধপোষ্য শিশু নন। আবার বাল্যকালে এবং কৈশোরে অপুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ফলে তাদের মেধার বিকাশ ঘটেনি তেমনটিও নয়। আসলে যে গোষ্ঠীটি সুনিপুণ কৌশলে একটিও আর্তচিৎকার দেশের সীমানার বাইরে যাওয়াতো দূরে থাক ঘরের চারদেয়ালের বাইরে পর্যন্ত যেতে না দিয়ে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে হিন্দু নির্যাতন চালাতে চালাতে বাংলাদেশেকে প্রায় হিন্দুশূণ্য করে ফেলেছে তাদের বোধহীন বলতে আমার তীব্র আপত্তি আছে।
ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে ইসকনের হাজারো সমালোচনা করার অবকাশ থাকলেও জঙ্গি সংগঠনের প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী ইসকনের কার্যকলাপ বিচার করলে সহজেই অনুমেয় ইসকন তার আশপাশ দিয়েও যায়না, সুতরাং ইসকনের বিরুদ্ধে ব্যপকভাবে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা যে নিছক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা বোঝাটা খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়, যে নিরীহ ধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে সরাসরি জঙ্গি সংগঠন সাব্যস্ত করার পিছনে এই গোষ্ঠীর স্বার্থটা ঠিক কোথায়?
আপনি যদি ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবেন তাহলেই বুঝতে পারবেন বাংলাদেশে ক্রমাগত হিন্দু নির্যাতনের বিষয়টিকে যদি কেউ এই মুহুর্তে জোড়ালো ভাবে আন্তর্জাতিক মহলে উত্থাপন করতে পারে তা হলো ইসকন। আন্তর্জাতিক মহলে ইসকনের প্রতিপত্তি কোনো অংশে কম নয়, আমেরিকা এবং ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলিসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ইসকনের প্রভাব রয়েছে, সেক্ষেত্রে ইসকন যদি বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে হিন্দু নির্যাতন এবং বাংলাদেশকে হিন্দুশূণ্য করার চক্রান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সরব হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বীগ্ন হতে বাধ্য।
আর এই গোষ্ঠীটির ইসকনের উপর রাগও মূলত এই যায়গায়। হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তাদের সাথে এইদেশে বিগত ৭০ বছর ধরে যে নির্যাতন চলছে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে এমন কোনো সংগঠনকে এইদেশে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া যাবেনা, সেই কারণেই এই গোষ্ঠীটি ইসকন প্রসঙ্গে আজকাল এতখানি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছে আর এই গোষ্ঠীটি ইসকনকে রুখে দেওয়া পর্যন্ত এইভাবেই প্রতিক্রিয়াশীল থাকবে।
হয়তো প্রসঙ্গের বাইরে তবে না বলে পারছিনা, বাংলাদেশের মতন একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র যে রাষ্ট্র আজ পর্যন্ত তার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিকদের, 'রাষ্ট্রের উপর সকল সম্প্রদায়ের সমান অধিকার রয়েছে' এই সামান্য বিষয়টিই বোঝাতে আপাদমস্তক ব্যর্থ হয়েছে তাঁরা যখন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় সংস্কার আনার জন্যে আইন প্রনয়ণ করে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের বাতাবরণ তৈরী হওয়াটাই স্বাভাবিক।
No comments